প্রকাশিত: Fri, Dec 30, 2022 3:41 PM
আপডেট: Mon, May 12, 2025 5:46 AM

পরাশক্তি মোকাবেলায় বাংলাদেশের অনন্য কূটনীতি!

প্রসূন তালুকদার

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মৌলনীতি হচ্ছে, ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’। কিন্তু বারবার 

দেখেছি, শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পিছপা হয় না। বাংলাদেশ সরাসরি কখনো এসব অন্যায় কাজের বিরোধিতা করতো না আগে। সম্প্রতি জাপানের দূতকে সরাসরি রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছে। বলা বাহুল্য জাপান মার্কিন বলয়ের সহযোগী রাষ্ট্র। এবার বিএনপিকে দিয়ে খেলাতে গিয়ে ধরা খেলো স্বয়ং আমেরিকা। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়া ‘ধরি মাছ না ছুই পানি’র মতো, ‘সাপও মরলো লাঠিও ভাঙ্গলো না’। রাশিয়াকে দিয়েই মাইরটা দেওয়ালো বাংলাদেশ। 

সংবাদ ছিলো এরকম ‘বাংলাদেশ নিয়ে দুই পরাশক্তির বাগযুদ্ধ’। সংবাদে ছিলো,‘যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার বাগযুদ্ধে এবার যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ ইস্যু। মস্কো বলছে, ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার সুরক্ষার কথা বলে ক্রমাগত দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এর প্রতিক্রিয়ায় ওয়াশিংটন বলছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রাশিয়া। এটা (এই নীতি) কি ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? 

বাংলাদেশকে নিয়ে দুই পরাশক্তির এ স্নায়ুযুদ্ধে অবশ্য চুপ থাকার নীতি গ্রহণ করেছে ঢাকা। গত ২২ ডিসেম্বর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে মন্তব্য করেন, ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শাহীনবাগে যাওয়ার বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের চেষ্টা বলে মনে করে রাশিয়া। রুশ ভাষার ওই ব্রিফিংয়ের একটি ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্ট ঢাকার গণমাধ্যমে সরবরাহ করে রুশ দূতাবাস। বিবৃতিটি রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটেও রয়েছে। ‘বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের চেষ্টা’ উপশিরোনামে প্রচারিত ব্রিফিংয়ের ইংরেজি ট্রান্সক্রিপ্টে বলা হয়, ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে শাহীনবাগে ঘটে যাওয়া বহুল প্রচারিত ঘটনাটি রাশিয়া নোটে নিয়েছে। সেখানে স্থানীয় একটি সংগঠনের বাধার মুখে পড়েছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত, যা তাঁর জন্য নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছিলো। 

২০১৩ সাল থেকে নিখোঁজ বিরোধী রাজনৈতিক দলের এক সমর্থকের পরিবারের সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের বিরোধিতায় সেখানে জড়ো হয়েছিলেন ওই সংগঠনের কর্মীরা। রাশিয়া মনে করে ঘটনাটি আমেরিকান কূটনীতিকের তৎপরতারই একটি প্রত্যাশিত ফল। বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকারের প্রতি যত্নবান হওয়ার অজুহাতে ক্রমাগতভাবে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। এ অভিযোগের সঙ্গে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র যুক্ত করেন, বাংলাদেশে ব্রিটিশ ও জার্মান মিশনের তার (আমেরিকান রাষ্ট্রদূতের) সহকর্মীরাও একই ধরনের কাজ করছেন। তারা বাংলাদেশে আগামী সংসদ নির্বাচন স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে প্রকাশ্যে সুপারিশ করছেন। এরপর ২৪ ঘণ্টা না যেতেই মস্কোর এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস এক টুইটে প্রশ্ন করে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে রাশিয়া, এটা কি ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? এদিকে ইউক্রেন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের কী ভূমিকা এবং ইউরোপে তার প্রভাব কেমন, তা নিয়ে টুইটারে একটি ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করে ঢাকাস্থ রুশ দূতাবাস। এসব ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে বিশ্বের দুই পরাশক্তির পরস্পরবিরোধী অবস্থান পুনরায় প্রতীয়মান হয়।